আজ পহেলা ফেব্রুয়ারী । বাঙালী প্রাণের ভাষার মাস !!

 মনোয়ার হোসেন মারুফ #

 আজ পহেলা ফেব্রুয়ারী। ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিন।  এই মাসটি বাঙালীর কাছে প্রাণের মাস। এই মাসটির ২১ তারিখ বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক মহা মূল্যবান সংযোজন।  ২১ শে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন উপলক্ষে নেয়া হয় নানা কর্মসূচী। জাতীয় শোক দিবস হওয়ায় ঐদিন জাতীয় পাকা থাকে অর্ধনমিত। ফেব্রুয়ারী তাই শোকের মাস হিসেবে পরিচিত। এটি একটি ঐতিহাসিক মর্যাদা ও ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত দিন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারীর মর্যাদা বিশ্ব পরিমন্ডলে বিস্তৃত হয়েছে। বাঙালীর গর্ব ও অহংকারের দিনও এটি। ভাষা দিবস হিসেবেও দিবসটির পরিচিতি আছে। ১৯৫২ সালে পশ্চিম পাকিস্তানীগণ কর্তৃক শাসিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের দামাল ও অকুতোভয় ছেলেরা নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষার তাগিদে রাজপথে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” শ্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে মিছিল করেন। দাবি আদায়ের উক্ত মিছিল-সমাবেশগুলোতে পাকিস্তানী বর্বর পুলিশের নিক্ষিপ্ত তপ্ত বুলেটে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ আরো অনেকে শহীদ হন। তাদের মহান আত্মত্যাগে বেগবান ভাষা আন্দোলন অপ্রতিহত এক আন্দোলনে রুপ নেয়। একসময় পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে যথার্থ স্বীকৃতি দিলে এই আন্দোলন সফল এক আন্দোলন হিসেবে ইতিহাসে স্থান পায়। ভাষা আন্দোলনের সঞ্জিবনী শক্তিই পরবর্তীতে বাঙ্গালী জাতিকে আত্ম চেনা এক জাতিতে পরিণত করে। এরই ধারাবাহিকতায় অনেক ত্যাগ-তীতিক্ষার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে বিশ্বের বুকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটে।


দ্বিজাতিত্ব এর ভিত্তিতে পাক-ভারত সীমানা চিহ্নিত হওয়ার পর পাকিস্তানের ঊর্দূ ভাষী শাসকগোষ্ঠী চেয়েছিল ঊর্দূকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে। কিন্তু বাঙালী ছাত্র-কৃষকসহ আমজনতা পাকিস্তান শাসকদের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান ও রুখে দেয়ার জন্য মরণপণ লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এই লড়াইয়ের মাঠে প্রাণ দেন জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে গড়ে ওঠে শহীদ মিনার।  প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারী ভোরে এই মহীদ মিনারে শ্রদ্ধা ও মমতায় পূষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতি বীর ভাষা শহীদদের অমর করে রাখে। বাঙালী জাতি বিশ্বাস করে ভাষা মানে তাদের অস্তিত্ব। এই ভাষা হারিয়ে গেলে বাঙালী তার ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে। অস্তিত্ব রক্ষা ও সময়ের প্রয়োজনে  ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর গর্বিত আত্মত্যাগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিশ্বের বুকে সেদিন বাঙালী জাতি এক সাহসী ও প্রতিবাদী জাতি হিসেবে নিজেদেরকে নতুনভাবে জানান দিয়েছিল। সেদিন শাসকের রক্তচোক্ষু স্তব্ধ করে দিয়েছিল এই বাংলার দামাল ছেলেদের প্রত্যয়ী মনোভাব। ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে নিয়ে  বাঙালী কবি সাহিত্যিকেরা রচনা করেছেন অসংখ্য কবিতা, গান ও প্রবন্ধ। যা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ। আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী গানটি এই দিবসটিকে নিয়ে রচিত সর্বাধিক জনপ্রিয় গান। এই গান গাইতে গাইতেই প্রভাত ফেরি করে শহীদ মিনারের দিকে ফুল হাতে আজো ছুটে চলেছে বাঙালী। ভাই হারানোর শোক বুকে নিয়ে আজো বাঙালী বয়ে বেড়াচ্ছে সেই আবেগঘণ স্মৃতি। ভাষা শহীদদের এই রক্তঋণ কোনদিন শোধ হবেনা। এই দিনটির কল্যাণে পুরো ফেব্রুয়ারী মাসটি বাঙালীর কাছে বছরের অন্য ১১ টি মাসের চেয়ে একটু ভিন্ন আবেদন বহন করে।

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ভেড়ামারায় এস আই বি এল এর উপ শাখার উদ্বোধন

আজ বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এসআইবিএল এর উপ শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে।  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভেড়ামারা উপজ...

সংবাদ সর্বক্ষণ